কক্সবাজার প্রতিনিধি: কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডে কার্যালয়ের ভেতর কিছু আসবাবপত্র ও দলীয় ব্যানার পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অবশ্য স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা আগুন দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিক নেভাতে এগিয়ে আসায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
দলীয় কার্যালয়টি ইউনিয়নের ছিকলঘাট স্টেশনে অবস্থিত। গত বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে আজ সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ।
দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে দাবি করেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। এ ঘটনায় বিএনপি জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতাদের।
লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ করেছেন, বুধবার বিকেলে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বাড়িতে জেলা, উপজেলা, পৌরসভাসহ বিভিন্ন স্তরের সিনিয়র নেতাকর্মীরা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা ধানের শীষের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও নৌকার সমর্থনে মিছিল বের করলে দুই দলের মিছিল মুখোমুখি হয়। এ সময় বিএনপির মিছিল থেকে আওয়ামী লীগকে নিয়ে কটূক্তিমূলক আচরণ করার জের ধরে দুই পক্সে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হুমকি দেওয়া হয়।
লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ জানায়, এ ঘটনার পর কক্সবাজার ১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের মহাজোট তথা নৌকার প্রার্থী জাফর আলম দলীয় কার্যালয়ে এসে নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নৌকার সমর্থনে সভা করার। এর পর জাফর আলমসহ দলীয় নেতাকর্মীরা বাড়িতে চলে যান। কিন্তু রাত দেড়টার দিকে দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনাটি ঘটে।
লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম সেলিম বলেন, জনৈক বিএনপি নেতার বাড়িতে গোপন বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের তাৎক্ষণিক তৎপরতার কারণে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পায় কার্যালয়সহ আশপাশের অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এমনকি অগ্নিসংযোগের সময় বিদ্যুৎ না থাকায় বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে ছিকলঘাট স্টেশনটি।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ সময় বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তিসাপেক্ষে এ ঘটনায় পরবর্তী আইনগত পদক্সেপ নেওয়া হবে।
অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিচলিত কক্সবাজার ১ আসনের আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট প্রার্থী জাফর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতীক পাওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চালাতে। কিন্তু আমাদের শান্তিপূর্ণ এই প্রচারণাকে বিএনপির ভালো লাগছে না। তারা চাচ্ছে এলাকাকে অশান্ত করে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে। এরই ধারাবাহিকতায় লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বুধবার রাতে অগ্নিসংযোগ করে বিএনপি। বিষয়টি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের করা এই অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থানীয় একাধিক নেতাকর্মী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, আসল ঘটনা কী তা প্রশাসন তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।